جُمُعَة (জুমুআহ) শব্দটি আরবী । এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া । যেহেতু, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামায়াতের সাথে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরযরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে "জুমার নামাজ" বলা হয়।
শুক্রবার দিন যোহরের পরিবর্তে জুমআর নামাজ পড়তে হয়। স্বাধীন, বয়স্ক, সুস্থ চলাফেরা করতে সমর্থ, সজ্ঞান ও দৃষ্টিসম্পন্ন মুকীম মুসলমান পুরুষদের উপর জুমআর নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা ফরয। গোলাম, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, রোগী, পাগল, অন্ধ ও প্রবাসীর জন্য জুমআর নামাজ ফরয নয়-তবে যদি আদায় করে তবে জায়েয হবে।
✅ জুমা সম্পর্কিত কিছু হাদিস সমুহ:
সালমান (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগ সহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)
রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।’ (তিরমিজি হাদিস : ৫০২)
✅ জুমার নামাজ কত রাকআত?
⏩ দু’রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নিয়ত।⏩ দু’রাকাত দুখলিল মাসজিদের নিয়ত।
⏩ চার রাকাত কাবলাল জুমআর নিয়ত।
⏩ মনোযোগ সহকারে জুমআর খুতবা শোনা এবং খুতবার সময় কোনো প্রকার কথা না বলা। এমনিতেও মসজিদে দুনিয়াবী কোনো কথা না বলা. এটা আদবের খেলাপ।
⏩ জুমআর দু’রাকআত ফরযের নিয়ত।
⏩ চার রাকআত বা'দাল জুমআর নিয়ত।
✅ জুমআর দিনের বিশেষ আমল
জুমার দিন এমন একটি সময় আছে বান্দা ওই সময় যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তা কবুল করে নেন। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, জুমার দিন বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তাই কবুল করে নেন। তোমরা ওই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান করো। (বুখারি : ৯৩৫)
⏩ জুমার দিনের বিশেষ আমলগুলো একনজরে
♻️ মিসওয়াক করা।
♻️ গায়ে তেল ব্যবহার করা।
♻️ উত্তম পোশাক পরে জুমা আদায় করা।
♻️ মুসল্লিরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা।
♻️ পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
♻️ জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১০৪৭)।
♻️ বেশি বেশি দোয়া করা।
♻️ মুসল্লিদের উপর দিয়ে সামনের কাতারে না যাওয়া।
♻️ জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বিশেষ নুর (আলো) দ্বারা আলোকিত করে দেবেন। (বায়হাকি : ৬২০৯)
♻️ দুরুদ শরীফ ৮০ বার:
❗জুমার নামাজের রাকাত ছুটে গেলে করণীয়
কারও জুমার নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে বাকি আর এক রাকাত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমা হয়ে যাবে। অনুরূপ কেউ দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর আগে থেকে পেলেও ওই রাকাত এবং তার সঙ্গে আর এক রাকাত পড়লে তারও জুমার নামাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকাতের রুকু শেষ হওয়ার পর জামাতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমার নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে জোহরের ৪ রাকাত আদায়ের নিয়তে জামাতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ৪ রাকাত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি : ১/৪১৮, ৪২১)
আর কেউ যদি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমা শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে জোহরের নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাত ছাড়া জুমার নামাজ হয় না।
হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকু না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (ইবনে আবি শাইবা : ৬২১)
কোনো ইমাম সাহেব যদি বিনা ওজুতে জুমার নামাজ পড়িয়ে নামাজের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ওই নামাজ কাজা করতে ৪ রাকআত জোহর পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওয়া : ৩/৬৮)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুমার দিনের এই বিশেষ আমলগুলো পালনের মাধ্যমে এর পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুক।