ফজরের ফরজ নামাজ এবং এরপর প্রয়োজনীয় কিছু আমল

Masjid at Fajr Time

ফজরের নামাজ মোট ৪ রাকাতঃ প্রথমে সুন্নত ২ রাকাত; এরপর ফরজ ২ রাকাত

ফজরের ফরজ নামাজ একটি অত্যন্ত মুখ্য নামাজ যা মুসলিমদের প্রতিদিন অবশ্যই আদায় করতে হয়। ফজরের নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল হল:

♻️ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর উপরে তাকিয়ে। (১)

১ বার "الله أَكْبَر‎" বলে ৩ বার "أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ" পাঠ করতেন।

♻️ সালাতের পরের যিকর (২)


অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি শান্তি (সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র) এবং তোমার নিকট থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমময়, মহানুভব!

♻️ ১ বার আয়াতুল কুরসি পাঠ করা(৩)

অর্থ‬: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

♻️ সূরা কাফিরুনইখলাস, ফালাক্বসূরা নাস ১ বার করে পড়া

এরপর বুকে একবার ফু দিয়ে দুই হাত একত্রিত করে তাতে ফু দিয়ে সমস্ত শরীর একবার স্পর্শ করা।

♻️ سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ (৩৩ বার), ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ (৩৩ বার), اللَّهُ أَكْبَرُ (৩ বার) ***

♻️ বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদে থাকার দোয়া - ৩ বার(৪)




অর্থ: আল্লাহর নামের উসিলায় সাহায্য প্রার্থনা করছি। যার নামের সঙ্গে থাকা অবস্থায় আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারে না। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।

♻️ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া - ৩ বার(৫)

অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

♻️ রোগব্যাধি থেকে রক্ষার দোয়া -  ১ বার। (৬)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।

♻️ জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া - ৭ বার

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন। (৭.১)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (৭.২)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে। (৭.৩)

♻️ حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ، نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ - ৭ বার(৮)

অর্থ: আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই হলেন উত্তম কর্মবিধায়ক; আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।

♻️ সাইয়িদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার দো‘আ -  বার(৯)

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।

♻️ ইস্তেগফার ও তওবার দোয়া -  বার

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আমার সব পাপের, আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বাঁচার ও নেক কাজ করার কোনোই শক্তি নেই।

♻️ পরীক্ষিত আমল -  বার

উচ্চারণ: সুবহানআল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহুু ওয়াল্লাহু আকবার। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম। আল আউয়ালু ওয়াল আখিরু ওয়াল জহিরু ওয়াল বাতিনু বিয়াদিকাল খয়ির। ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদির।

♻️ সূরা ফাতিহা, কাফিরুনইখলাসফালাক্ব ও সূরা নাস - প্রতিটি ৩ বার

প্রত্যেকটি ৩ বার করে, ফজর ও মাগরিবের পর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না।

♻️ দরুদ শরীফ (দরুদে ইব্রাহিম) - ১০ বার

দরুদ শরীফ ১০ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। কেয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শাফা'আত লাভ করবে।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।

♻️ আমলের পাল্লা ভারী হওয়ার দোয়া - ১০০ বার।  (১০)

♻️ ফজরের নামাজের পর তাসবিহ -  কমপক্ষে ৭ অথবা ১০০ বার

অর্থ: তিনি চির জীবিত ও চিরস্থায়ী।

♻️ সুরা হাশর পড়া

নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি সকালে ৩ বার "أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ العَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ" এর সাথে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত একবার পাঠ করবে আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐ ব্যাক্তির জন্য ইস্তিগফার করতে থাকে, সেদিন যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে ব্যাক্তি শহীদী মৃত্যু লাভ করবেন। আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত সে অনুরুপ মর্যাদার অধিকারী হবেন।

♻️ সুরা ইয়াসিন পড়া

হাদিসে সুরা ইয়াসিন পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। প্রতিদিন সকালে সুরা ইয়াসিন পড়তে পারি আমরা।

যোহরের ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল

এশার ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল

হাদিসে সুরা ইয়াসিন পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। প্রতিদিন সকালে সুরা ইয়াসিন পড়তে পারি আমরা।


- মুসলিম, ১২২২

- মুসলিম, ১২২১

- আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও অন্তরায় থাকবে না, (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ২৩৯৫)।

- বিশিষ্ট সাহাবি হজরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দোয়া তিনবার পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক দুর্ঘটনার শিকার হবে না। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এ দোয়া তিনবার পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক দুর্ঘটনার শিকার হবে না। (আবু দাউদ: ৫০৯০, তিরমিজি: ৩৩৮৮)

- আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন, (আহমাদ: ৪/৩৩৭,  ১৮৯৬৭; আবু দাউদ: ৪/৩১৮, ১৫৩১; তিরমিযী: ৫/৪৬৫, ৩৩৮৯)।

- রোগব্যাধি থেকে হেফাজতের জন্য নবীজি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিম্নের দোয়াটি পড়তেন। (আবু দাউদ: ১৫৫৪)

৭.১ - হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২/৭৪১, ৫০৭৯)

৭.২ - রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”। (তিরমিযি: ২৫৭২, ইবনে মাজাহ: ৪৩৪০)

৭.৩ -  বুখারী: ২/১০২, ১৩৭৭; মুসলিম: ১/৪১২, ৫৮৮।

- ‘حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ’ অংশটি কোরআনের আয়াত। এটি পড়ার কথা পবিত্র সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। ইবরাহিম (আঃ) কে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো এবং রাসুল (ﷺ) (মুশরিকদের হামলা হবে এমন খবর শুনে হামরাউল আসাদে) উক্ত দোয়াটি পাঠ করেন (বুখারি: ৪৫৬৩; সুরা আল ইমরান: ১৭৩) এছাড়াও আল্লাহর রাসুল (ﷺ) এই বিশেষ দোয়াটি পাঠ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন (তিরমিজি: ৩২৪৩; আল-আহাদিস আস-সাহিহা: ১০৭৯) আর ‘نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ’ অংশটিও কোরআনের আয়াত; আল্লাহর প্রশংসাসূচক। (সুরা আনফাল: ৪০; সুরা হজ: ৭৮)

- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’। (১০৫) বুখারী, মিশকাত: ২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।)

১০ - রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার এই দোয়াটি বলে তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। (বুখারী: ৭/১৬৮, ৬৪০৫; মুসলিম: ৪/২০৭১, ২৬৯১)

*** তাসবীহ গণনায় বামহাত বা তাসবীহ মালা ব্যবহার না করে কেবল ডানহাত ব্যবহার করাই উত্তম। (মুসলিম: ১২৪০; সহীহুল জামে: ৪৮৬৫)