রাতের আমল - রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যা করতে বলেছেন


ঘুমানোর আগে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যা করতে বলেছেন

♻️ খাবার পাত্র, পানির পাত্র সবকিছুই উত্তমভাবে ঢেকে রাখা, পানির পাত্রের মুখ বন্ধ করে রাখা। (তিরমিজি:১৮১২)

♻️ শোয়ার স্থান নির্বাচনে সতর্কতা

নির্জন কোনো ঘরে একাকী রাত যাপনের বিষয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (ﷺ) কোনো ঘরে একাকী রাতযাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (আহমাদ, হাদিস নং: ৫৬৫০)

বাসা-বাড়ির ছাদেও শোয়া উচিত নয়। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমায়, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৫০৪১)

♻️ বিছানা ঝেড়ে নেয়া।

ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। নবী করিম (ﷺ) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৩২০) (মিশকাত:২৩৮৪)

♻️ ওযূ করা। (সহীহ তারগীব ৫৯৪, ৫৯৫)

♻️ ঘুমাবার আগে ঘরের বাতি নিভিয়ে দেয়া এবং দরজা বন্ধ করা। (আদাবুল মুফরাদ:১২৩৩)

✅ সূরা ফাতিহা (১) পাঠ করা

✅ আয়াতুল কুরসি (আয়াত নং - ২৫৫)

যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে শয়তান সারা রাত তার নিকটে যাবে না। (বুখারি-২৩১১)।

✅ সূরা বাকারার (২) শেষ দুই আয়াত

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যদি কেউ রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (আ-মানার রাসূলু–) তেলাওয়াত করবে, তবে তা তার জন্য যথেষ্টই হবে।’ (বোখারি-৪০০৮ ও মুসলিম)।

✅ সূরা কাহাফের (১৮) প্রথম দশ আয়াত পাঠ করা

✅ সুরা ওয়াকিয়া (৫৬) পাঠ করা

যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াক্কিয়া পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবে, আল্লাহ তাকে খ্যাতি এবং রিজিক থেকে কখনও বঞ্চিত করবেন না।

✅ সূরা মূলক (৭) পাঠ করা

যে ব্যাক্তি প্রত্যেক রাতে তাবারকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক (সূরা মূলক) পাঠ করবে এর মাধ্যমে মহিয়ান আল্লাহ্ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। (তিরমিজি-২৮৯০)।

✅ কুরআনের আয়াত (দেখে হোক বা মুখস্থ হোক) তিলাওয়াত করা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিছু সূরা পড়তেন এবং উম্মতকেও পড়ার উৎসাহ দিয়েছেন; যেমনঃ প্রতিরাতে একশত আয়াত পড়ার ব্যাপারেও উৎসাহ দেয়া হয়েছে। (মিশকাত: ১২০১ ও ২১৫৫)

♻️ (৮২) আল ইনফিতার

♻️ (৮৫) আল বুরূজ

♻️ (৮৬) আত্ব তারিক্ব

♻️ (৮৭) আল আ'লা

♻️ (৮৮) আল গাশিয়াহ

♻️ (৮৯) আল ফজর

♻️ (৯০) আল বালাদ

♻️ (৯১) আশ শামস

♻️ (৯২) আল লায়ল

♻️ (৯৩) আদ্ব দ্বোহা

♻️ (৯৫) আত্ব ত্বীন

♻️ (৯৭) আল কদর

♻️ (১০১) আল কারেয়া

♻️ (১০২) আল তাকাসূর

♻️ (১০৩) আল আসর

♻️ (১০৪) আল হুমাযাহ

♻️ (১০৫) আল ফীল

♻️ (১০৬) কুরাইশ

♻️ (১০৭) আল মাঊন

♻️ (১০৮) আল কাওসার

♻️ (১০৯) আল কাফিরুন

♻️ (১১০) আন নাসর

♻️ (১১২) আল ইখলাস

♻️ (১১৩) আল ফালাক্ব

♻️ (১১৪) আন নাস

বিঃদ্রঃ আপনি চাইলে আপনার পছন্দমত আরো সুরা পরতে পারবেন, এখানে আমি আমার মুখস্ত সুরাগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী রেখেছি যেনো এগুলো দেখে সহযে তিলাওয়াত করতে পারি

✅ সূরা কাফিরুন (১০৯)

রাতে (কুল ইয়া আইয়্যু হাল কা-ফিরুন) (অর্থাৎ সূরা কা-ফিরুন) পাঠ করা শির্ক থেকে মুক্তি পেতে উপকারী।  (সহীহ তারগীব-৬০২)

✅ সূরা ইখলাস (২) ৩ বার

একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার সাহাবাদের বললেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অসমর্থ হবে? এতে সকলকে বিষয়টি ভারী মনে হলো। বলল, একাজ আমাদের মধ্যে কে পারবে, হে আল্লাহর রাসূল?! তিনি বললেন, সূরা ইখলাস হল এক তৃতীয়াংশ কুরআন। (বুখারী- ৫০১৫)

✅ সূরা ফালাক্ব (৩) ও সূরা নাস (৪) পড়া - ৩ বার

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সূরা এখলাছ, ফালাক ও নাস এক বার পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বুলাতেন। এভাবে তিনবার এই কাজটি করতেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫০১৭)

✅ (৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্, এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার বলা

প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (ﷺ) হযরত আলী এবং ফতেমা (রাঃ)- কে বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিবো না যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা 

(৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্, এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার বলবে, তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে।  (বুখারী- ৩৭০৫)।

✅ সূরা ইখলাস -  বার

প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (ﷺ) বলেন যে ব্যক্তি দিনে  ১০ বার আল-ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন।

✅ সায়্যিদুল ইস্তিগফার - কমপক্ষে ১০ বার

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। (বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।)

✅ ইস্তেগফার করা - ১০০ বার

আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি

✅ দরূদ পাঠ করা - কমপক্ষে ১০ বার

♻️ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।

♻️ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া সাল্লিম আলাইহি।

♻️ জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদাম মা হুয়া আহলুহু।

♻️ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।

♻️ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

♻️ আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলান নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়ালা আলিহি ওয়া আসহাবিহ


মহানবী (সা.)-এর নাম উচ্চারণের সময় সর্বদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (আল্লাহ তাঁর ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন) বলা হয়। এটিও একটি দরুদ। (বুখারি : ২/৯৪০, আবু দাউদ : ৮০, নাসাঈ : ১/১৪৫, তিবরানি : ৮/২৭, আল কাউলুল বাদি : ২৮৪)

✅ জিকির করা

 ডান কাত হয়ে শোয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন ডান হাত ডান গালের নিচে রাখতেন এবং বলতেনঃ

رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
“রাব্বি কিনী আযাবাকা ইয়াওমা তাব’আসু ইবা-দাক”

অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিন সে দিনের আযাব থেকে যেদিন আপনার বান্দাদের পুনরুথিত করা হবে। (তিরমিজি:৩৩৯৮)

 ঘুমানোর পূর্বে এই দোয়া পড়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর ডান হাত তাঁর গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দো‘য়া টি বলতেন।

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺃَﻣُﻮﺕُ ﻭَﺃَﺣْﻴَﺎ
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আহইয়া”

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার নামেই মৃত্যুলাভ (নিদ্রা) করছি এবং তোমার নামেই জীবিত (জাগ্রত) হব। (বুখারি:৬৩২৪)

 ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে এই দোয়া পাঠ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانًا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহইয়ানা-বা’দা মা-আমা-তানা-ওয়া ইলায়হিন নুশূর”

অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর! যিনি মৃত্যুর পর জীবন দিয়েছেন আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (মুসলিমঃ৬৭৮০)

উপরিউক্ত আমলগুলো করলে শুধু সুন্নাহ অনুসরণ হবে তা নয়, বরং সওয়াব তো হবেই পাশাপাশি বিভিন্ন অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তা'য়ালা নিরাপদ রাখবেন। (বিভিন্ন অনিষ্ট মানে জ্বীনের আছর, বদনজর, তাবিজ সংক্রান্ত বিষয়াদি, আকস্মিক দুর্ঘটনা)

আল্লাহ্ পাক আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুক, আমিন।