বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম | বিতর নামাজ কত রাকাত | বিতর নামাজের ইতিহাস

সর্বমোট সময়ঃ ২০ মিনিট
আমলের সময়ঃ এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত, তবে উত্তম হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আদায় করা। যদি তাহাজ্জুদ ছুটে যাওয়ার শঙ্কা থাকে তাহলে এশার নামাজের পরই আদায় করে নিতে হবে।

বিতর নামাজ বা বিতর সালাত (সালাতুল বিতর) হল বিজোড় সংখ্যক রাকআত বিশিষ্ট নামাজ যেটি মুসলিমরা রাতে এশার নামাজের পর পড়ে। এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় বিতর নামাজ পড়া যায়।

বিতর শব্দের অর্থ- বিজোড়। এশার নামাজের পর এক থেকে এগারো রাকআত পর্যন্ত বিজোড় সংখ্যক রাকআত বিতর নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

✅ বিতর নামাজের নিয়ত আরবি ও বাংলা

আরবি: تويت أن أصلى لله تعالى ثلاث ركعات صلوة الوتر واجب الله تعالی متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা ছালাছা রাকাআতি ছলাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

অনুবাদ: কা’বা শরীফমুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে তিন রাকাত বিতরের ওয়াজিব নামায পড়তে নিয়ত করলাম । আল্লাহ আকবার।

✅ বিতর নামাজের নিয়ম

১. বিতর নামাজ মোট ৩ রাকাত। প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে যেকোন সুরা মিলাতে হবে।
২. প্রথম ২ রাকাত শেষে বসে তাশাহুদ পড়ে আবার দাড়াতে হবে।
৩. তৃতীয় রাকাতে দাড়িয়ে সুরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোন সুরা মিলাতে হবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠাবে। পুনরায় হাত বাধতে হবে।
৪. হাত বাধার পর দোয়া কুনুত পড়তে হবে। দোয়া কুনুত পড়ার পর রুকু ও সিজদা করে বসে তাশাহুদ,  দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সলাম ফিরাবে।

✅ দোয়া কুনুত

আরবি: اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু'মিনু বিকা, ওয়া  তাওয়াক্কালু 'আলাইকা, ওয়া নুছনী 'আলাইকাল খ-ইর। ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ক।

অনুবাদ: হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল, মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না, এবং যারা তোমার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ আমরা তোমারই দাসত্ব করি তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি, আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

✅ বিতর নামাজে দোয়া কুনুত ভুলে না পড়লে বা পড়তে ভুলে গেলে এর বিধান কি?

অনেকে বিতর নামাজে শেষ রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়তে ভুলে যায় অথবা পড়তে ভুলে গেলে।  তখন কি করবে। এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। দোয়া কুনুত পড়তে ভুলে গেলে এর বিধান হলো সাহু সিজদা দেওয়া। সাহু সিজদা দেওয়া ওয়াজিব। সাহু সিজদা না দিলে পুনরায় আবার বিতর নামাজ পড়তে হবে।

✅ বিতর নামাজের ইতিহাস

বর্ণিত আছে,  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) যখন মিরাজে গমন করলেন। তখন ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম (عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ) এর সাথে দেখা হয়। হযরত মুসা আঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে বললেন,  আপনি যখন সিদরাতুলমুনতাহা পৌঁছে যাবেন। আমার জন্য ১ রাকাত নামাজ পড়বেন। তখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ বললেন, হে মুসা আঃ ঠিক আছে।  আমি সিদরাতুলমুনতাহা গিয়ে আপনার জন্য ১ রাকাত নামাজ পড়বো। তারপর রাসুল সাঃ সিদরাতুলমুনতাহা গিয়ে হযরত মুসা আঃ এর সাথে ওয়াদা দেওয়ার কথা মনে পড়ে। তখন তিনি ১ রাকাত পড়ার পর আবার দাড়িয়ে আল্লহর জন্য ১ রাকাত পড়লেন। রাসুল সাঃ ২ রাকাত নামাজ পড়ার পর আবার দাড়িয়ে নিজের জন্য ১ রাকাত পড়তে গিয়ে রুকুতে যাওয়ার আগে তিনি আল্লাহু আকবার বা উল্টা তাকবির দিলেন। এ নামাজ আল্লাহর কাছে পছন্দ হয়। আর তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য বিতর নামাজ ওয়াজিব করে দেন।

✅ ✅ ✅ হাদীস

আলী (রা:) বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বিতর (বিজোড়)। তিনি বিজোড়কে ভালোবাসেন। অতএব, হে কুরআনের বাহকগণ! তোমরা বিতর সলাত আদায় কর। — তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী

সাহাবী জাবির (রা:) বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আশঙ্কা করে যে, শেষ রাতে উঠতে পারবে না সে যেন প্রথম রাতেই বিতরের সলাত আদায় করে নেয়। আর যে লোক শেষ রাত্রে উঠতে পারবে বলে মনে করে, সে যেন শেষ রাতেই বিতরের সলাত আদায় করে। এজন্য যে, শেষ রাতের সলাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটা অনেক ভাল। — সহীহ মুসলিম